ছেলেটার নাম শিশির।বাবা কাপড় ব্যবসায়ী।আয় ভালো।তবে ছেলের স্বভাব ভালো না।তার সঙ্গীরা খারাপ।সং দোষে লোহা ভাসে বলে শুনেছি।তবে কোথায় ভাসে জানিনা।আবার কীভাবে ভাসে তাও জানিনা।জাহাজ পানিতে ভাসে।কিন্তু তার জন্যে সং দোষের প্রয়োজন পড়ে না।যা হোক,এটা পন্ডিতদের ব্যাপার।শিশির একটু দেরী করে স্কুল পাশ করেছে।তবে,সে যে পাশ করেছে এটাতেই তারা খুশি।তারা বলতে আসলে খুশি সে এবং তার বাবা।তার মা নেই।তার বয়স যখন ২ তখন তার মা মারা যায়।বাবা আর বিয়ে করেনি।বংশের প্রদ্বীপ হয়ে জ্বলছে।তো,কলেজে ওঠার পর পড়াশোনা আর কিছুই হল না।বখাটেদের সাথে ঘুরতে লাগলো।ঈদের সময় আসলেই তারা বিভিন্ন প্রকার সেবামূলক কাজে(অন্তত এরা সেটাই মনে করে) ঝাঁপিয়ে পড়ে।প্রতিদিন সেহেরীতে ঢোল বাজিয়ে মানুষকে জাগানোর জন্যে মাসের শেষে চাঁদা ওঠানো।মানুষ ঢোলের শব্দে জাগুক আর না জাগুক,মাসের শেষে চাঁদা দিতেই হবে।শিশিরদের ২য় কাজ হল,ঈদ কার্ডের দোকান দেওয়া।পুরনো সব কার্ড এরা ঈদের পরপরই কিনে রাখে এবং পরের ঈদে সেগুলো বিক্রি করে।কিছু কোমলমতি বাচ্চা কাচ্চা যাদের ঘোরাঘুরির গন্ডি স্কুল,প্রাইভেট,বাসা এই তিনটাতেই সীমাবদ্ধ,তারা-ই মূলত এদের কাস্টমার।শিশিরদের ২য় কাজটা হল পটকা ফাটানো।পটকা নামক এই বস্তু ফাটিয়ে তারা এক বিচিত্র স্টাইলে মনের আনন্দ প্রকাশ করে থাকে।রোজার আগে পটকা উতসব শুরু হয় এবং ঈদের পরে(যতদিন পটকা অবশিষ্ট থাকে) কিছুদিন পর্যন্ত থাকে।শিশির এই পটকা উথসবের আয়োজক।তাকে পটকা গবেষকও বলা যেতে পারে।পটকা সম্পর্কে তার জ্ঞান অনেকটাই ডাক্তারের রোগ সম্পর্কে ধারণার মত।এই কারণে তার নাম পটকপাদ।তবে পটকের পরে পাদ লাগানোর একটা কাহিনী আছে।শিশির তার গবেষনার মাধ্যমে পটকা আবিষ্কারের ঘটনা জানতে পেরেছে।এখন সেটা সে অন্যদের বলে।এখানে আবিষ্কারের ঘটোনাটি তুলে ধরছিঃ
অনেক আগে পটকট মিত্র নামে এক রাজা বাস করতেন(কোথাকার রাজা এটা নিয়ে পাঠকের মনে কোন রকম কৌতুহল কামনা করছিনা)।আগেকার রাজাদের বিচিত্র সব শখ হত,এখন আর হয় না।কেননা,আগে গণতন্ত্র বলতে কিছু ছিলো না।এখন আছে।আগে রাজা হত বংশ পরম্পরায়।রাজা যা বলত তাই হত।তো,এই রাজা মহাশয় কিছুদিন থেকে একটা ব্যাপার নিয়ে চিন্তিত।তিনি খেয়াল করে দেখেছেন,যখন তিনি বায়ু ত্যাগ করেন(যাকে আমরা পাদ বলে অভ্যস্ত)তখন একটা অদ্ভুত শব্দ হয়।আসলে একটা না।একেকবার একেকটা।কখনও আবার শব্দ হয় না।তবে কেন এরকম হয় এটা রাজার চিন্তার বিষয় না।মাঝে মাঝে বিশেষ কিছু পাদ রাজার খুব ভালো লাগে।সেই পাদের শব্দ কীভাবে সবসময় শোনা যায়,এটা বের করার জন্যে রাজা রাজ্যের গবেষকদের আদেশ করলেন।যে করেই হোক,রাজাকে সমাধান করে দিতেই হবে।নাহলে,গর্দান যাবে।গবেষকরা অনেক চিন্তা ভাবনা করে একটা সমাধান বের করলেন।বর্ণনাটি অনেকটা এরকমঃ
বিভিন্ন প্রকার পাদ এবং তাদের বৈশিষ্টঃ
১)ফুস পাদঃএতে শব্দ নেই,গন্ধ আছে।অতি জঘন্য।
২)ভট পাদঃএতে ভট করে আওয়াজ হয়।গন্ধ নাই।
৩)পুঁই পাদঃএটা স্বল্পকালীন পাদ।আওয়াজ কম।মাঝে মাঝে গন্ধ হয়(অনেকটা মুলা নামক সবজির মত)
৪)পোঁওও পাদঃএটা কিছুটা দীর্ঘকালীন পাদ।শব্দ আছে।
৫)পট পাদঃএটাতে পটাশ করে আওয়াজ হয়।
এরকম আরও অনেক পাদের বর্ণনা।রাজা বিবরণ দেখে এবং পাদের শব্দ পর্যবেক্ষন করে দেখলেন পট পাদ তাঁর খুবই ভালো লাগছে।তিনি এরপর থেকে প্রতি মাসে একবার করে রাজ্যে এই পট পাদের প্রতিযোগিতা করার আয়োজন করতে আদেশ দিলেন।আস্তে আস্তে সমস্ত রাজ্যে এই পাদ জনপ্রিয় হতে শুরু করলো।বিজ্ঞানীরাও চিন্তা করে একটা বস্তু বের করলেন যাকে ফাটালে পাদের মত শব্দ হয়।তবে শব্দটা অনেক জোরে।সেই বস্তুটাই আজ পটকা নামে সমাজে বহুল প্রচলিত।
এই গল্পের জন্য শিশিরকে সবাই “পটকপাদ” বলে।তবে,যা-ই হোক,শিশির আর তার বন্ধুদের পটকা উতসব জমজমাট।অনেক রকম পটকা তারা বিক্রি করে।পটকার নামগুলোও চমতকার!মরিচ পটকা,বোমা পটকা,লাদেন পটকা,বুড়িমা পটকা,চকোলেট পটকা আরও কত কী।পাড়ায় যত পটকা ফাটে তার প্রায় সবগুলোই শিশিরদের ফাটানো।মাঝে মাঝে কিছু দূর্ঘটনাও ঘটে।এই যেমন গত ঈদের ঘটনা,সুমন(পাড়ার ছেলে,বয়স ১৩/১৪,ভূতের সিনেমা দেখে,কিন্তু খুব ভীতু) একটা হরর মুভি দেখে টয়লেট এ ঢুকেছে প্রস্রাব করবে বলে।তখনই কারেণ্ট গেছে।ভয়ে এমনিতেই পেশাব আটকিয়ে গেল।ঠিক তখনই পাশেই দুম করে পটকা ফাটলো।সুমন প্যান্টটার চেইন লাগানোর আগেই অজ্ঞান হয়ে গেলো।পরে দরজা ভেঙ্গে বের করতে হল তাকে।আরেকটা ঘটনা,হনু প্রসাদ একজন স্মোকার।সেদিন মুখে সিগারেট নিয়ে আগুন কেবল মুখের কাছে এনেছেন,অমনি দুম।আগুনটা মুখে লাগলো।পুড়ে গেলো মুখ।এরপর থেকেই পাড়ার দুষ্টু ছেলেরা তাকে দেখলেই বলে উঠত,“মুখ পোড়া হনু”।স্নিগ্ধা বাজার করে এসেছে।বড় কাজের প্রচণ্ড চাপ লেগেছে।বাজারে থাকার সময় টের পায়নি।রিক্সায় উঠার পর থেকেই বুঝতে পেরেছে।বাসায় পৌঁছালো অনেক কষ্টে।আর ধরে রাখতে পারছে না।জলদি গেল টয়লেট এ।গিয়ে যেই হালকা করতে শুরু করবে,তখনই হইচই।বাসায় আগুন লেগেছে।কিন্তু স্নিগ্ধার অবস্থা যা তাতে এই অবস্থায় উঠে আসা সম্ভব না।আবার না বেরুলে পুড়তে হবে।এরপর,যেটা ঘটল সেটা বলতে আমার লজ্জা লাগছে।পাঠক ভাবছেন এই কথা এখানে কেন?কারণ,এই আগুনের পেছনেও আছে পটকা।
যাহোক,এবার পটকপাদ শিশিরের ব্যপারটা বলে শেষ করি।শিশিরের বিয়ের দিন ধার্য হয়েছে।এই ইদের পরই বিয়ে।ঈদে যথারীতি পটকা ফাটানো শুরু হয়েছে।এরা একসাথে ৫টা পটকা ফাটায়।ফাটার পর সবাই একসাথে শিয়ালের মত আওয়াজ করে পালায়।ভয় পায়,নাকি আনন্দে সেটা জানিনা।তবে,সেদিন পটকা ফাটানোর সময় পুলিশ তাড়া করেছিলো।কপাল খারাপ বলতে হবে শিশিরের।তা নাহোলে তার সাথে এতোগুলো কাকতালীয় ঘটনা ঘটে একবারে?পুলিশ তাড়ছে দেখে শিশির একটু মজা করতে চায়লো।সে পটকার সুতায় আগুন দিয়ে যেই পুলিশের দিকে ছুড়বে এমন সময় কারও পায়ে ধাক্কা খেয়ে পড়ে গেল।কাকতালীয়ভাবে পড়লো তারই জ্বালানো পটকার উপর।তখনই পটাশ!কাক্তালীয়ভাবে বিয়ের কদিন আগেই বেচারা শিশিরকে তার জননাঙগটা বিসর্জন দিতে দিতে হল।তবে মজার একটা ঘটনা ঘটলো।আর ঘটনাটা বিয়ের দিনের।…..