বাস্তবিক কল্পনা
কিছুদিন থেকেই একটা থম্থমে পরিবেশ বিরাজ করছে প্রতিষ্ঠানটিতে।তাই,আজ এমডি স্যারের রুমে সভা বসেছে।ব্রেইন(এমডি) হলেন সভাপতি।শুরু হল সভাঃ
ব্রেইনঃকিছুদিন থেকেই আপনাদের মধ্যে কাজে অবহেলার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।এটার কারণ এবং সমাধানের উপায় খুঁজতেই আজকের সভা।প্রথমেই মিস্টার স্টোমাক,আপনেই শুরু করুন।
স্টোমাকঃধন্যবাদ মাননীয় এমডি।আপনি আমার উপর যে দায়িত্ব দিয়েছিলেন,সেগুলো আমি যথার্থভাবে পালন করছি।কিন্তু কিছুদিন থেকে আমার স্টকে কাঁচামালের(খাদ্য) ঘাটতি দেখা যাচ্ছে।তাই,আমার স্বাভাবিক কাজে একটু প্রব্লেম হচ্ছে।এই ব্যাপারে আমি মিস্টার মাঊথের দৃষ্টি আকর্ষন করেছিলাম।কিন্তু তিনি সমাধান দেন্নি।
মাঊথঃএভাবে কথা বলছেন কেন মিস্টার স্টোমাক?আমি তো আপনাকে আমার সীমাবদ্ধতার কথা বলেছি।মিস্টার ব্রেইন,মিসেস হ্যান্ড কিছুদিন থেকে অফিসে আসছেন না।এর ফলে আমি যথেষ্ঠ পরিমাণ কাঁচামাল সাপ্লাই দিতে পারছিনা।এক্ষেত্রে মিস্টার হ্যান্ড(চামচের সাহায্যে) কিছুটা সাহায্য করছেন ঠিক।কিন্তু পুরোপুরি পারছেন না।
ব্রেইনঃমিস্টার ব্রেইন,আপনার মিসেস আসছেন না কেন?
মিস্টার হ্যান্ডঃউনি আর অফিসে আসবেন না।
ব্রেইনঃকিন্তু কেন?
মিস্টার হ্যান্ডঃমিস্টার নার্ভ উনাকে অপমানজনক কথা বলেছেন।তাছাড়া কাজের সময় ঠিকভাবে হেল্প করতেন না তাঁকে।
ব্রেইনঃঘটনা সত্যি,মিস্টার নার্ভ?
নার্ভ চুপচাপ।
ব্রেইনঃআপনার নিরবতা-ই প্রমাণ করছে,আপনি দোষী।আপনাকে এটার জন্যে শাস্তি ভোগ করতে হবে।
নার্ভঃআমাকে শাস্তি দিলে আসল দোষীরও শাস্তি পাওয়া উচিত।মিস্ হার্ট আপার সাথে মিসেস হ্যান্ডের একটু মন কষাকষি চলছিল।তাই,মিস্ হার্ট আপা ব্লাড সাপ্লাই এ সমস্যা করছিলেন।আমি আপনাকে এটা জানাতে চায়ছিলাম।কিন্তু হার্ট আপা আমাকে চাকরি খোয়ানোর ভয় দেখিয়ে চুপ রাখেন।
ব্রেইনঃসত্যি,মিস্ হার্ট?তাহলে তো আপনাকে শাস্তি পেতে হবে।
মিস্ হার্টঃআমাকে শাস্তি দিলে আমি এই অফিস ছেড়ে চলে যাবো।
লিভারঃছিঃ মিস্ হার্ট।আপনার কথাতো পুরোপুরি কিডন্যাপারদের মত হয়ে যাচ্ছে।
মিস্ হার্টঃএই,নিজের গায়ের রঙ আয়নায় দেখেছ একবার?কথাবার্তা ভেবে বলবে।
স্টোমাকঃখামোখা লিভারকে ধমকাবেন না,মিস্।সারাদিন রুপচর্চা করতে করতে তো আপনারতো আবার অফিসের কাজের কথা মনে ই থাকে না।
মিস্ হার্টঃএই মটু চুপ কর।
নার্ভঃল্যাঙ্গুয়েজ ঠিক করুন মিস্।আর স্টোমাকের সাথে আমিও একমত।
ব্রেইনঃআপনারা দয়া করে থামুন।সমস্যা সবার ই থাকে।আপনারা আবার আগের মত পুরো উদ্যমে কাজ করুন।আর,মিস্ হার্ট,আপনাকে ওয়ারনিং দেওয়া থাকলো।ভবিষ্যতে এরকম কাজ করলে শাস্তি আপনাকে পেতে হবে।এখন আপনারা নিজ নিজ কাজে যান।
মিস্ হার্টঃএটা কী হল মিস্টার ব্রেইন?সবার সামনে আমাকে অপমান করার শাস্তি কি এরা পাবেনা?
মিসেস আইঃআমি হার্ট আপার সাথে একমত।মেয়েরা সব জায়গায় বঞ্চিত।
স্টোমাকঃমিস্টার ব্রেইন, মিস্ হার্ট এত বড় একটা অপরাধ করেও ছাড় পেয়ে যাচ্ছেন?বিচারটা কি এক পেশে হয়ে গেল না?
শুরু হল তুমুল ঝগড়া।সভা অমিমাংসিতভাবে শেষ হল। এটা কল্পনা।এই প্রতিষ্ঠানটি হল আমাদের শরীর।সবাই নিজের কাজগুলো না করে অন্যের উপর দোষ চাপালে অসুস্থ হয়ে পড়ব আম্রা।সুপ্রিয় পাঠক,এবার আপনি আমাদের দেশটাকে নিজের শরীর কল্পনা করে গল্পের শুরু থেকে মিলিয়ে দেখুন্তো একবার।আমাদের বাস্তবতার সাথে এটার কি তফাত খুব বেশী?আশা করি বিজ্ঞ পাঠককে ভেঙ্গে বলতে হবেনা আমি কি বুঝাতে চাচ্ছি।
................................................................................................................................
“অবস্থা যা,তাতে স্পেডকে স্পেড বলাই বাঞ্চনীয়”।এখানে পাঠক বেশি বিশ্লেষনে না গিয়ে
ঘটনা পড়ে গেলেই চলবে।কৃষ্ণকায় একটা ছেলে একটা বোরখা পরা মেয়েকে নিয়ে আসলো।জায়গাটা
আমাদের কাছেই।সরু লেকটার ধারেই।এসেই জোর করে মেয়েটার স্তন টিপতে লাগলো।মেয়েটা বারবার ছেলেটার হাত সরিয়ে দিচ্ছিলো।কিন্তু ছেলেটা থামছিলো না।আমার কাছে ব্যাপারটা
বাড়াবাড়ি বলে মনে হল তাই আবু(আমার বন্ধু)কে নিয়ে গেলাম ছেলেটাকে থামানোর
জন্যে।আমরা আসছি দেখে তারা চলে গেলো।তারপর সেকানে আরও এক জুটি আসলো।এরাও একই কাজে
ব্যস্ত,তবে স্বেচ্ছায়।আমরা যেখানে বসেছিলাম সেখানে অনেক হেরোইন খোর ঘোরাঘুরি করে
টাকা চায়।একটা শিশুও আসলো।শিশুটা অদ্ভুত স্বরে একটা কথা-ই বারবার বলে যেতে
থাকলো,“দেএএএএন”।যতক্ষন তাকে কেও টাকা না দিচ্ছে ততক্ষন সে অভাবে চায়তে লাগলো।এক প্রেমিক(মহাবিরক্ত
হয়ে নাকি প্রেমিকার সামনে ভাব নেবার জন্যে জানিনা) তাকে লাত্থি দিলো।আমরা শিশুটিকে
কিছুটা খাবার দিয়ে বিদায় করলাম।এরপর আমরা পাহাড়ের দিকে গেলাম।পাহাড়ের পাশেই এক
জুটির দিকে চোখ গেলো।ছেলেটা শার্ট খুললো।আমরা কৌতুহলী হয়ে দেখতে থাকলাম কী
হয়।কিন্তু যা ভেবেছিলাম তেমন কিছুনা।ছেলেটা বগলে পাঊডার দিয়ে শার্ট পর নিলো।আমরা
পাহাড়ে উঠলাম।আমাদের দেখে এক জুটি তাদের এলোমেলো হয়ে থাকা কাপড় ঠিক করে নিলো।তারপর
নিচে নেমে গেলো।ছেলেটা মেয়েটাকে একটা গাছের সাথে ঠেস দিয়ে ধরলো।চুমু দেওয়ার পর
কাপড় না খুলেই যৌনক্রিয়া আরম্ভ করে দিলো।একটা লোক আবার থাকতে না পেরে কাছে গেলো
ইংলিশ মুভি উপভোগ করার জন্য।লোকটাকে দেখে জুটি অপুর্ণ তৃপ্তি নিয়ে সেখান থেকে সরে
গেলো।কিছুক্ষন বিশ্রাম নিয়ে আমরা নিচে নেমে আসলাম।এসেই দেখি সাব্রিনাকে।একে কখনও
এই অবস্থায় দেখবো বলে ভাবিনি।মানুষ কত সহজেই এসব দিকে পা বাড়াই?দেখি সাব্রিনা আর নাঈম কিস্ করছে,গলা
চুলকিয়ে দিচ্ছে…..।চিড়িয়াখানা থেকে বের হতেই দেখি দু’টা কুকুর শত শত লোকের সামনে যৌনক্রিয়ায়
লিপ্ত।স্রষ্টা তাদের জন্যে মানুষের মত বাসা দেন নি।দিলে তারা এই কাজ করত কিনা
জানিনা।শুধু জানি,কুকুরদের মস্তিষ্কে এটা নেই যে “তারা যেটা করছে সেটা খোলা
জায়গাতে,সবার সামনে করা উচিত না”।
................................................................................................................................
চিড়িয়াখানায় কিছু আজব চিড়িয়া
(কারও জীবনে ঘটনাগুলো মিলে গেলে সেটা কাকতালমাত্র।এর জন্যে লেখক দায়ী নন)
বুধবার
সকালে বন্ধুরা হঠাত ঠিক করলাম ঘুরতে বের হবো।কোথায় যাওয়া যায়?রাজশাহীতে ঘোরার
জায়গা বলতে হাতেগোনা কিছু স্থান যেগুলো ইতোমধ্যেই আমাদের দেখা হয়েছে।তাই,ঘুরতে
চাইলে পরিচিত স্থানেই যেতে হবে।ঠিক করলাম,চিড়িয়াখানায় যাবো।গেলাম।রাস্তায়
অটোরিক্সাকে কিছুক্ষন বসিয়ে রেখে খাবার আনতে গেলাম।একটু দেরী হল বার্গারগুলো গরম
করতে।আমাদের সহযাত্রী(দু’জন সুন্দরী) ও ড্রাইভার সাহেব মহাবিরক্ত।ড্রাইভার যেন
অকথ্য ভাষায় আমাদের গালি না দিতে পারে সেজন্য শাহেদকে বসিয়ে রেখে গেছিলাম।এসে দেখি
আমাদের জায়গায় আরও একজনকে তুলেছে।২ জনের স্থানে ৩ জন তোলার কারণ জানতে চাইলাম
ড্রাইভারের কাছে।সে ত্যাড়া করে বললো,
“ওইখানেই বসতে হবে।গাড়িতো আর নতুন চালাই না”
আমিও কণ্ঠস্বর রূড় করে বললাম,
“মামু,আমরাওতো আর নতুন না।বইসা ছিলেন বলে আবার উঠলাম।কথা বাড়ায়েন না।চলেন”
ড্রাইভার কিছু না বলে চালাতে লাগলো।চিড়িয়াখানায় পৌঁছার পর দেখি ৪০ টাকার ভাড়া ২৮ টাকা চায়লো।যাহোক,ভেতরে ঢুক্লাম টিকিট কেটে।ভল্লুকের পাশের খাঁচা-ই বাঘের।তবে ওটা যে বাঘের খাঁচা এটা বুঝলাম খাঁচায় ঝোলানো সাইনবোর্ড দেখে।বাঘ নাই।মরে গেছে।এরপর সিংহের খাঁচা দেখে সোজা চলে গেলাম বানরের খাঁচার সামনে।এই প্রাণিটার প্রতি আমার প্রবল আকর্ষন।বুদ্ধি,বাদাম ধরার দক্ষতা,মজার মজার কাণ্ডকীর্তি দেখে খুবই মজা পাই।কিছুক্ষণ বাদাম খাওয়ালাম।এরপর গেলাম বেবুনের খাঁচার সামনে।এরা বানরের চেয়ে নোংরা।তারপর গেলাম উদবিড়ালের খাঁচার কাছে।সেখান থেকে যে জন্তুটার কাছে গেলাম এটাও আমাকে খুব আকৃষ্ট করে।মেছোবাঘ।চরম খ্যাপা সব সময়।একটুতেই গর্জন করে।এদের দেখলে মনে পড়ে,“বন্যেরা বনে সুন্দর,শিশুরা মাতৃক্রোড়ে”।এই বাক্যটি যদি সত্য হয়,তাহলে আমরা কিছু অসুন্দর ঘটনা উপভোগ করতে এখানে আসলাম?এসেছি যখন আর কি করার।পাখ পাখালি,ময়ূর,ঘোড়া,গাধা,হরিণ,ঘড়িয়াল প্রায় সবই দেখলাম।ঘড়িয়াল ওরিয়েন্টাল অঞ্চলের এন্ডোমিক প্রাণী।বর্তমানে বিলুপ্তপ্রায়।যাহোক,এই অবস্থায় ভাবলাম,চিড়িয়া দেখা বোধহয় শেষ।এখন,খাওয়া দাওয়া শেষে বের হবো।খাওয়ার জন্যে জায়গা খুঁজছি।লেকের ধার দিয়ে হাঁটার সময় মনে হতে থাকলো,কর্তৃপক্ষ যদি এই ব্রিজ থেকে অপারের পাহাড় পর্যন্ত আরেকটা টিকিট সিস্টেম চালু করে তাহলে বেশ লাভবান হবে।কারণ,এখানে যে বিচিত্র চিড়িয়া দেখা যায়,তাদের মধ্যে হরেক রকম প্রাণীর মিশ্রণ দেখা যায়।দেখতে তারা মানুষের মত।প্রথম ব্রিজটা পার হতেই একটা লোকের দিকে চোখ গেলো।সে চিতকার করে বলছে,“বের করে দিবি।ওরকম লোক ছাড়াও পার্ক চল্বে।আরও ভালোভাবে চলবে”। এখানে যাদেরকে ইঙ্গিত করে লোকটা কথাগুলো বলেছে তারা হলো আমার এই বিচিত্র চিড়িয়া।লোকটা চিড়িয়াখানার কর্মচারী।তার কথার ঝাঁঝ শুনে ভাবলাম,যাক,চিড়িয়াখানা বোধহয় সভ্য হয়েছে কিছুটা।কিন্তু ভুল ভাঙ্গতে সময় লাগলো না।দু’পা এগুতেই প্রেমের নরকে(আসলে এই কীর্তিকলাপকে স্বর্গ বলতে ইচ্ছা হচ্ছে না) প্রবেশ করলাম।চিড়িয়াগুলো জোড়ায় জোড়ায় বসে আছে।আমরা বসার জন্যে জায়গা ফাঁকা পাচ্ছিলাম না।একটু জায়গা পেতেই বসে পড়লাম।ভাব্লাম আমাদের পাশের জোড়াগুলো হয়ত উঠে যাবে।কিন্তু লজ্জার মাথা খেয়ে তারা আমাদের সামনেই তাদের কাজ চালিয়ে যেতে লাগলো।সামনের জুটি চুমু খেলো একে অপরকে।ছেলেটা চরম উত্তেজিত।ঠোঁট ছাড়ছেই না।কিন্তু,মেয়েটার খেয়াল হল,তাই সে একটা কাপড় দিয়ে আড়াল করলো নিজেদের।আমাদের পাশের জুটি ঝগড়া করছে।মেয়েটা কেন দেরী করে এলো এই নিয়ে ঝগড়া।পিছনেই এক জুটি।দেখে মনে হচ্ছে পালিয়ে বিয়ে করেছে।কাছে ট্রাভেল ব্যাগ।মেয়েটা শাঁড়ি পরা শেখেনি ঠিকমত।এবার যেটা দেখলাম সেটা কখনও দেখবো বলে ভাবিনি।পাঠকের অবগতির জন্যে প্রয়াত লেখক হুমায়ূন আহমেদের অপরাহ্নের গল্প নামক প্রবন্ধের একটা উক্তি এখানে দিয়ে রাখছি,
“ওইখানেই বসতে হবে।গাড়িতো আর নতুন চালাই না”
আমিও কণ্ঠস্বর রূড় করে বললাম,
“মামু,আমরাওতো আর নতুন না।বইসা ছিলেন বলে আবার উঠলাম।কথা বাড়ায়েন না।চলেন”
ড্রাইভার কিছু না বলে চালাতে লাগলো।চিড়িয়াখানায় পৌঁছার পর দেখি ৪০ টাকার ভাড়া ২৮ টাকা চায়লো।যাহোক,ভেতরে ঢুক্লাম টিকিট কেটে।ভল্লুকের পাশের খাঁচা-ই বাঘের।তবে ওটা যে বাঘের খাঁচা এটা বুঝলাম খাঁচায় ঝোলানো সাইনবোর্ড দেখে।বাঘ নাই।মরে গেছে।এরপর সিংহের খাঁচা দেখে সোজা চলে গেলাম বানরের খাঁচার সামনে।এই প্রাণিটার প্রতি আমার প্রবল আকর্ষন।বুদ্ধি,বাদাম ধরার দক্ষতা,মজার মজার কাণ্ডকীর্তি দেখে খুবই মজা পাই।কিছুক্ষণ বাদাম খাওয়ালাম।এরপর গেলাম বেবুনের খাঁচার সামনে।এরা বানরের চেয়ে নোংরা।তারপর গেলাম উদবিড়ালের খাঁচার কাছে।সেখান থেকে যে জন্তুটার কাছে গেলাম এটাও আমাকে খুব আকৃষ্ট করে।মেছোবাঘ।চরম খ্যাপা সব সময়।একটুতেই গর্জন করে।এদের দেখলে মনে পড়ে,“বন্যেরা বনে সুন্দর,শিশুরা মাতৃক্রোড়ে”।এই বাক্যটি যদি সত্য হয়,তাহলে আমরা কিছু অসুন্দর ঘটনা উপভোগ করতে এখানে আসলাম?এসেছি যখন আর কি করার।পাখ পাখালি,ময়ূর,ঘোড়া,গাধা,হরিণ,ঘড়িয়াল প্রায় সবই দেখলাম।ঘড়িয়াল ওরিয়েন্টাল অঞ্চলের এন্ডোমিক প্রাণী।বর্তমানে বিলুপ্তপ্রায়।যাহোক,এই অবস্থায় ভাবলাম,চিড়িয়া দেখা বোধহয় শেষ।এখন,খাওয়া দাওয়া শেষে বের হবো।খাওয়ার জন্যে জায়গা খুঁজছি।লেকের ধার দিয়ে হাঁটার সময় মনে হতে থাকলো,কর্তৃপক্ষ যদি এই ব্রিজ থেকে অপারের পাহাড় পর্যন্ত আরেকটা টিকিট সিস্টেম চালু করে তাহলে বেশ লাভবান হবে।কারণ,এখানে যে বিচিত্র চিড়িয়া দেখা যায়,তাদের মধ্যে হরেক রকম প্রাণীর মিশ্রণ দেখা যায়।দেখতে তারা মানুষের মত।প্রথম ব্রিজটা পার হতেই একটা লোকের দিকে চোখ গেলো।সে চিতকার করে বলছে,“বের করে দিবি।ওরকম লোক ছাড়াও পার্ক চল্বে।আরও ভালোভাবে চলবে”। এখানে যাদেরকে ইঙ্গিত করে লোকটা কথাগুলো বলেছে তারা হলো আমার এই বিচিত্র চিড়িয়া।লোকটা চিড়িয়াখানার কর্মচারী।তার কথার ঝাঁঝ শুনে ভাবলাম,যাক,চিড়িয়াখানা বোধহয় সভ্য হয়েছে কিছুটা।কিন্তু ভুল ভাঙ্গতে সময় লাগলো না।দু’পা এগুতেই প্রেমের নরকে(আসলে এই কীর্তিকলাপকে স্বর্গ বলতে ইচ্ছা হচ্ছে না) প্রবেশ করলাম।চিড়িয়াগুলো জোড়ায় জোড়ায় বসে আছে।আমরা বসার জন্যে জায়গা ফাঁকা পাচ্ছিলাম না।একটু জায়গা পেতেই বসে পড়লাম।ভাব্লাম আমাদের পাশের জোড়াগুলো হয়ত উঠে যাবে।কিন্তু লজ্জার মাথা খেয়ে তারা আমাদের সামনেই তাদের কাজ চালিয়ে যেতে লাগলো।সামনের জুটি চুমু খেলো একে অপরকে।ছেলেটা চরম উত্তেজিত।ঠোঁট ছাড়ছেই না।কিন্তু,মেয়েটার খেয়াল হল,তাই সে একটা কাপড় দিয়ে আড়াল করলো নিজেদের।আমাদের পাশের জুটি ঝগড়া করছে।মেয়েটা কেন দেরী করে এলো এই নিয়ে ঝগড়া।পিছনেই এক জুটি।দেখে মনে হচ্ছে পালিয়ে বিয়ে করেছে।কাছে ট্রাভেল ব্যাগ।মেয়েটা শাঁড়ি পরা শেখেনি ঠিকমত।এবার যেটা দেখলাম সেটা কখনও দেখবো বলে ভাবিনি।পাঠকের অবগতির জন্যে প্রয়াত লেখক হুমায়ূন আহমেদের অপরাহ্নের গল্প নামক প্রবন্ধের একটা উক্তি এখানে দিয়ে রাখছি,
“অবস্থা যা,তাতে স্পেডকে স্পেড বলাই বাঞ্চনীয়”।এখানে পাঠক বেশি বিশ্লেষনে না গিয়ে
ঘটনা পড়ে গেলেই চলবে।কৃষ্ণকায় একটা ছেলে একটা বোরখা পরা মেয়েকে নিয়ে আসলো।জায়গাটা
আমাদের কাছেই।সরু লেকটার ধারেই।এসেই জোর করে মেয়েটার স্তন টিপতে লাগলো।মেয়েটা বারবার ছেলেটার হাত সরিয়ে দিচ্ছিলো।কিন্তু ছেলেটা থামছিলো না।আমার কাছে ব্যাপারটা
বাড়াবাড়ি বলে মনে হল তাই আবু(আমার বন্ধু)কে নিয়ে গেলাম ছেলেটাকে থামানোর
জন্যে।আমরা আসছি দেখে তারা চলে গেলো।তারপর সেকানে আরও এক জুটি আসলো।এরাও একই কাজে
ব্যস্ত,তবে স্বেচ্ছায়।আমরা যেখানে বসেছিলাম সেখানে অনেক হেরোইন খোর ঘোরাঘুরি করে
টাকা চায়।একটা শিশুও আসলো।শিশুটা অদ্ভুত স্বরে একটা কথা-ই বারবার বলে যেতে
থাকলো,“দেএএএএন”।যতক্ষন তাকে কেও টাকা না দিচ্ছে ততক্ষন সে অভাবে চায়তে লাগলো।এক প্রেমিক(মহাবিরক্ত
হয়ে নাকি প্রেমিকার সামনে ভাব নেবার জন্যে জানিনা) তাকে লাত্থি দিলো।আমরা শিশুটিকে
কিছুটা খাবার দিয়ে বিদায় করলাম।এরপর আমরা পাহাড়ের দিকে গেলাম।পাহাড়ের পাশেই এক
জুটির দিকে চোখ গেলো।ছেলেটা শার্ট খুললো।আমরা কৌতুহলী হয়ে দেখতে থাকলাম কী
হয়।কিন্তু যা ভেবেছিলাম তেমন কিছুনা।ছেলেটা বগলে পাঊডার দিয়ে শার্ট পর নিলো।আমরা
পাহাড়ে উঠলাম।আমাদের দেখে এক জুটি তাদের এলোমেলো হয়ে থাকা কাপড় ঠিক করে নিলো।তারপর
নিচে নেমে গেলো।ছেলেটা মেয়েটাকে একটা গাছের সাথে ঠেস দিয়ে ধরলো।চুমু দেওয়ার পর
কাপড় না খুলেই যৌনক্রিয়া আরম্ভ করে দিলো।একটা লোক আবার থাকতে না পেরে কাছে গেলো
ইংলিশ মুভি উপভোগ করার জন্য।লোকটাকে দেখে জুটি অপুর্ণ তৃপ্তি নিয়ে সেখান থেকে সরে
গেলো।কিছুক্ষন বিশ্রাম নিয়ে আমরা নিচে নেমে আসলাম।এসেই দেখি সাব্রিনাকে।একে কখনও
এই অবস্থায় দেখবো বলে ভাবিনি।মানুষ কত সহজেই এসব দিকে পা বাড়াই?দেখি সাব্রিনা আর নাঈম কিস্ করছে,গলা
চুলকিয়ে দিচ্ছে…..।চিড়িয়াখানা থেকে বের হতেই দেখি দু’টা কুকুর শত শত লোকের সামনে যৌনক্রিয়ায়
লিপ্ত।স্রষ্টা তাদের জন্যে মানুষের মত বাসা দেন নি।দিলে তারা এই কাজ করত কিনা
জানিনা।শুধু জানি,কুকুরদের মস্তিষ্কে এটা নেই যে “তারা যেটা করছে সেটা খোলা
জায়গাতে,সবার সামনে করা উচিত না”।
.........................................................................................................
বন্ধুরূপী শত্রু
রাহাত।দেখতে শান্তশিষ্ট।ভদ্র ঘরের ছেলে।কিছুটা লাজুক প্রকৃতির।SSC পরীক্ষার ঠিক পরেই খুব একাকিত্ব বোধ করতে লাগলো বিশেষ কোন একজনের জন্যে।এটার অবশ্য কারণও আছে।রাহাতের বন্ধুদের অনেকেই প্রেম করে।আসলে এই বয়সে প্রেম করার অর্থ হল বন্ধু মহলে নিজেকে একটু বড় করে উপস্থাপন করে তোলা।সেক্ষেত্রে রাহাতের অবস্থান একেবারে শুন্য।প্রেম করাত দূরে থাক,মেয়ে কোন বন্ধু-ই রাহাতের ছিলোনা।সে মেয়েদের সাথে সহজভাবে কথা বলতেই পারেনা।তাছাড়া সে পড়াশোনাতেও খুব একটা ভালো না।কাউকে আকৃষ্ট করার মত কিছুই তার মধ্যে নেই।এসব কারণে রাহাত প্রায়ই বিষণ্ণ থাকত।হঠাত একদিন তার কিছু বন্ধু তাকে নতুন একটা বন্ধুর সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো।রাহাত প্রথমে নতুন বন্ধুর সাথে সখ্যতা করতে চায়ছিলো না।কিন্তু ধীরে ধীরে সখ্যতা শুরু করলো।আস্তে আস্তে রাতেও বন্ধুতির সাথে সম্পর্ক ঘনিষ্ট হয়ে উঠলো।সকালে,দুপুরে,বিকেলে,রাতে অন্তত একবার করে দেখা করা চাই-ই চাই।
রাহাত কলেজের হোস্টেলে থাকে।বন্ধুটি রাহাতকে রাত জাগতে সাহায্য করে,সাহসী করে তোলে,আড়ষ্ঠতা দূর করে,লাজুক ভাবটা সরিয়ে ফেলে ধীরে ধীরে।রাহাতও এই বন্ধুকে ছাড়া থাকতে পারেনা।সেকেন্ড ইয়ারে উঠতেই রাহাতের কয়েকটা মেয়ে বন্ধু জুটে গেল।এখন রাহাতের আর তেমন কোনো বিষন্নতাও আসেনা।আসলে বিষণ্নতা আসতে দেয় না রাহাতের সেই বন্ধুটি।রাহাতের সার্বক্ষণিক সঙ্গী সে।HSC পাশের পর রাহাত ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে কোথাও চান্স না পেয়ে কলেজের অনার্স কোর্সে ভর্তি হয়।বন্ধুটি তখনও রাহাতের সার্বক্ষণিক সঙ্গী।রাহাত কখনই তার বন্ধুকে ছাড়া থাকতে পারেনা।হঠাত একদিন রাহাত প্রচণ্ড অসুস্থ হয়ে পড়ে।ঠিকমত শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে পারছিলো না।বুকে প্রচণ্ড ব্যাথা। রুমমেটরা তাড়াতাড়ি করে তাকে হাস্পাতালে নিয়ে যায়।ডাক্তাররা প্রাথমিক চিকি্ত্সা দিয়ে কিছুটা সুস্থ করে তুলেন এবং কিছু টেস্ট করতে দেন।টেস্টে রাহাতের ফুস্ফুসে ক্যান্সার ধরা পড়ে।
আজ রাহাত হাস্পাতালের বেডে শুয়ে শুয়ে ভাবছে,তার সেই বন্ধুর কথা।বন্ধুটি আজও তার পাশে আছে।রাহাত অনেক বিশ্বাস করেছিল তার বন্ধুটিকে।বন্ধুটিও সারাক্ষণ রাহাতের পাশেই ছিলো।কিন্তু,সে রাহাতের কাছ থেকে আস্তে আস্তে সবকিছু নিয়ে নিয়েছে।রাহাতের টাকা-পয়সা,সময়,মেজাজ এমনকি গোটা শরীরটাও।রাহাত আজ মৃত্যুর মুখে এসে দাড়িয়েছে।সবাই ভাবছেন,রাহাতের সেই বন্ধুটি কে?হ্যাঁ,আমি বলবো তার পরিচয়।তবে,তার আগে বলুন তো,এরকম(যে তার সঙ্গীর সব কিছু নিয়ে নেয়) বন্ধুকে কি বন্ধু বলা যায়?সে তো আমাদের শত্রু।
আর রাহাতের সেই বন্ধুরূপী শত্রুটি হলো সিগারেট,যা রাহাতের মত এই গোটা সমাজটাকেই জ্বালিয়ে দিচ্ছে।তাই,আসুন,আমরা সিগারেটসহ সকল প্রকার মাদক দ্রব্য হতে দূরে থাকি।
No comments:
Post a Comment