অযথা কথা


আজ জীবণের প্রথমবার,যখন আমি একটা মেয়েকে লিখতে বস্‌লাম।এক্ষেত্রে আমি বন্ধু বললাম না কেননা,বন্ধুকে আগেও লিখেছি।কিন্তু মেয়েটি যখন বন্ধু,তখন তাকে সাধারণ বন্ধুর মধ্যে ফেলা যায়না।আমার জীবনে আগে কখনো মেয়ে বন্ধু ছিলোনা।আমাদের বন্ধুত্ব শুরু হওয়ার পূর্বশর্ত-ই ছিলো,আমাদের মধ্যে আর অন্য কোন সম্পর্ক তৈরী হবেনা।আমি কথাটা আবার বলে আমাদের বন্ধুত্বের সীমারেখাটা ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছি।আমি এই চিঠিতে তাই শুধু বন্ধুত্ব নিয়েই লিখবো।
আসলে,বন্ধুত্ব নিয়ে লেখা আমার ৪টা কবিতা ই আমার বেস্ট ফ্রেন্ডকে নিয়ে।তার সাথে বন্ধুত্ব হওয়ার ৪-৫ মাস পর থেকে তার বিভিন্ন রাগ,অভিমান,আনন্দ,কষ্ট,হাসি,ভালোবাসা,এসব দেখে কবিতা লিখতাম।কিন্তু তোর ক্ষেত্রে এসব ব্যাপার মিল্‌বে না।এখনও আমি তোকে অতটা ভালোভাবে বুঝিনা যতটা ভালোভাবে একটা বেস্ট ফ্রেন্ডকে বোঝা দরকার।তুই কি 
BEST FRIEND এর পুর্ণরূপ জানিস?
                
B=BOND.
                                        E=ENCOURAGEMENT.
                                        S=SUPPORT.
                                        T=TRUST.
                                        F=FAMILY.
                                        R=RELIABLE.
                                        I=INSPIRATION.
                                        E=ENJOYMENT.
                                        N=NEVER ENDING.
                                        D=DEPENDABLE.
আসলেই,কথাগুলো যুক্ত করে দ্যাখ,মনের মধ্যে বেস্ট ফ্রেন্ড ভেসে উঠেছে।আমি তোকে টেলিপ্যাথির কথা বলেছিলাম।বিষয়টা সম্পর্কে গভীর জানাশুনা আমার নাই।তবে সামান্য যেটুকু আছে সেটাতে বুঝি,আমার ক্ষেত্রে টেলিপ্যাথি হয়।বন্ধু।শব্দটা ছন্নছাড়া মনে হলেও আসলে,এটি খুব সুন্দর একটি শব্দ।আমি যেটা মনে করি সেটা
হল,বন্ধুত্ব একটা সিস্টেম।আর বন্ধু হল আমার আয়না(Mirror)কীভাবে?হ্যাঁ সেটার যুক্তি আমি দিবো এখন।আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে হাসলে আমার প্রতিবিম্বটাও হাসে,আমি কাঁদলে সেও কাঁদে।আমার মন খারাপ থাকলে তারও মন খারাপ হয়।আমার আনন্দ হলে তারও আনন্দ হয়।আসলে REAL FRIEND এর ক্ষেত্রে ব্যাপারটা সেরকম-ই।এক বন্ধু যা করে,অপর বন্ধুও সেটাই করে।তবে এই REAL FRIEND খুঁজে পাওয়াটা খুব কঠিন।আর যদি তাকে পাওয়া যায়,তাহলে সে সবসময় পাশে থাকে।আমি এটা মনে প্রাণে বিশ্বাস করি যে,দু’টো আত্মার বন্ধনে জন্ম নেয় বন্ধুত্ব।আমার কথাগুলো শুনতে ভালো লাগলো না,তাই তো?কিন্তু যদি এভাবে বলি,দু’টো মানুষের মনের মিল যখনই হবে,তখনই বন্ধুত্ব শুরু হবে।সেই মিল যতই গাঢ় হবে,বন্ধুত্বও তত গাঢ় হবে।এখানে মিল বলতে আমি বোঝাপড়াকে বুঝিয়েছি।একজন আরেক জনকে যত ভালোভাবে বুঝতে পারবে,বন্ধুত্ব ততই গাঢ় হবে।বেস্ট ফ্রেন্ডের খুশির চিন্তা এম্নিতেই মনের ভেতর চলে আসবে।তাকে বলতে হবেনা,এটা কর(আমার জন্য),ওটা কর(আমার জন্য)।আসলে প্রকৃত বন্ধু হলে সে এমনিতেই বুঝে নেবে।আর সে সেটা না করে কখনই থাকতে পারবেনা,তার বন্ধু বলুক কিংবা না বলুক।এটাই হল রিয়্যাল বেস্ট ফ্রেন্ডশিপ।তবে এটাও সত্য যে,সবার ক্ষেত্রে,ঈমোশনটা একরকম কাজ করে না।একেক জনের Emotion একেক রকম।সেক্ষেত্রে, Emotion কম হলে যে সে প্রকৃত বন্ধু নয়,এটা ভাবার কারণ নেই।কে কেমন?এই উত্তরটা দিতে পারবে তার সবচেয়ে কাছের মানুষ।সেটা বাবা,মা,ভাই,বোন,বন্ধু যে কেউ হতে পারে।এবার ফেরত আসি,বেস্ট ফ্রেন্ড প্রসঙ্গে।বেস্ট ফ্রেন্ড আমি তাকেই বলতে পারবো যাকে আমি আমার সব ব্যাপার শেয়ার করতে পারবো।সে আমার আয়না।তার কাছে গোপন রাখার মত কিছুই থাকবেনা।যেন নিজের অর্ধেকটা বাইরে রেখে বাকি অর্ধেকটা আমার ভেতরে আছে।আমি নিশ্চয় আমার দু’টো সত্তাকেই পছন্দ করবো।আমার বেস্ট ফ্রেন্ড হবে এমন যেন,সে আরেকটা আমি।আমি বোধহয় বুঝাতে পারলাম,কেন আমি আমার বেস্ট ফ্রেন্ডকে mirror বলেছি।এবার,আমি একটা গল্প শোনাবো।খুব মন দিয়ে পড়্‌।

(কাল্পনিক) কম্বডিয়ার একটা শহর।নাম,হীশাজরা।এই শহরে বাস করে “ন্যাং” নামের একটি ছেলে আর “লম্মু” নামের একটি মেয়ে।তাদের মধ্যে পরিচয় তেমন একটা নাই।তবে ছেলেটা মেয়েটাকে চেনে।তারা আলাদা আলাদা বিদ্যা নিকেতনে পড়ত।পরে কিভাবে যেন কিছুদিন তাদের মধ্যে ঘন ঘন দেখা হতে লাগলো।তাদের মধ্যে কথা বলাও শুরু হল।ন্যাং ভাবলো,লম্মু যদি তার বন্ধু হয়,তাহলে ভালো হত।কিন্তু সে তার মনের কথাটা কীভাবে লম্মুকে বলবে সেটা বুঝতে পারছিল না।অনেক ভাবার পর একদিন বল্লো লম্মুকে যে,সে তার বন্ধু হবে কিনা?লম্মু তখন তাকে হ্যা সূচক উত্তর দিলো।কিন্তু,ওই অল্প সময়ে গঠিত সম্পর্ককে কি বন্ধুত্ব বলা যায়?নিশ্চয় না।তাদের বাসা ছিলো বেশ দুরে।ন্যাং খুব কষ্ট পেতএকদিন,লম্মু তাকে একটা চিঠি দিল।সে চলে গেল তার শহরে।তবে মোবাইল নম্বর দিয়ে গেছেএভাবেই চলতে লাগলো।দিন যায়,মাস যায়,বছর যায়।এবার ন্যাং এর সামনে সু্যোগ আসে লম্মুর শহরে গিয়ে পড়ার।
ভাগ্যক্রমে তারা দু’জনেই একই প্রতিষ্ঠানে পড়ার সু্যোগ পায়।দু’জনেই খুব খুশি হয়।কিন্তু তারা কেউ ই জানত না যে,সেই আনন্দটা  ক্ষণস্থায়ী হবে।যাহোক,অবশেষে,ন্যাং এর শহরে যাবার সেই কাঙ্খিত দিনটি আস্‌লো।এই দিন সকাল থেকেই লম্মু খুব রোমাঞ্চিত।এই রোমাঞ্চের কারণ,ভালো প্রতিষ্ঠানে পড়বে এই কারণে নয়।বরং আজ তার প্রিয় বন্ধুর সাথে দেখা হবে,এটা কারণ।সে অনেক সাজলো।রান্না করলো ন্যাং এর প্রিয় চচ্চড়ি।লম্মুর ভাই স্টেশনে গেছে ন্যাংকে আনতে।অনেকক্ষণ হয়ে গেলো।এতো তো দেরী হবার কথা নয়।লম্মুর ভাই ফিরে আসলো।মুখ তার ফ্যাকাশে।সে একা এসেছে।লম্মুর বুকটা ছ্যাথ করে ওঠে।অজানা অপ্রিয় সত্তটা আজ শুনতে হচ্ছে তাকে।ন্যাং মারা গেছে অ্যাক্সিডেন্টে।সব কান্না একসাথে চোখ ফেটে বেরোতে চাচ্ছে তার।বাতাস ভারী লাগছে পাশে।এটাই বুঝি বন্ধুর টান।প্রিয়জন মারা গিয়ে বুঝিয়ে দিয়ে যায়,তার প্রতি বন্দুর অপার ভালোবাসা।
 
 তোকে এতক্ষণ যে গল্পটা বল্‌লাম সেটা কারো না।আমার আর তোর বন্ধুত্ব।আমি হলাম ন্যাং আর তুই লম্মু।দেশটাও আমাদের।শহরটাও আমাদের।কী?খুব রাগ হচ্ছে,গল্পের শেষটা পড়ে?আরে পাগল,কে তোকে বলেছে এটাই শেষ।আরও আছে।নে,পড়। 
উফ্‌।কি যন্ত্রনা।হঠাত কার যেন ধাক্কা অনুভব করল শরীরে লম্মু।সাথে একটা কণ্ঠ,”লম্মু,এই লম্মু,উঠ।আর কত ঘুমাবি?”লম্মুর মা লম্মুকে ডাকছে।মানে?এতক্ষণ তাহলে সে স্বপ্ন দেখলো?সৃষ্টিকর্তাকে অনেক ধন্যবাদ দিয়ে খুশিতে মনটা ভরে গেল তার।আরো খুশি হল,যখন ন্যাংকে তার সামনে দেখল।রাতের ট্রেনে ন্যাং এসেছে ঢাকা। 
গল্পটা প্রেমিক প্রেমিকাদের হলে ভালো হত,তাই না?কিন্তু আমরাত প্রেমিক প্রেমিকা নই।তাহলে?এবার পড়,গল্পের শেষ অংশ। 
তারা একই ডিপার্টমেন্টের স্টুডেন্ট।তাদের সামনে একটা অফার আসলো।অফারটা হল,প্রত্যেক ডিপার্টমেন্টের একজন করে অস্ট্রেলিয়ায় স্কলারশিপ নিয়ে যাবে।সে জন্যে সবাইকে প্রজেক্ট বানিয়ে জমা দিতে বলা হল।লম্মু আর ন্যাং দু’জনেই ট্যালেন্ট।তবে ন্যাং এর জন্য এই স্কলারশিপটা বেশি দরকার।তারা প্রজেক্ট বানিয়ে যুগ্ম ভাবে প্রথম হল।এবার তাদেরকে মৌখিক পরীক্ষায় ডাকা হল।কিন্তু হঠাথ ন্যাং এর মা অসুস্থ হওয়ায় সে পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেনা।এটা জানতে পারলো লম্মু।সেও পরীক্ষায় অংশ নিল না।সে জানতো,ন্যাং এর জন্যে এই স্কলারশিপ্টা খুবি দরকার।তাই সে, উপাচার্যের কাছে লিখিত ভাবে তার অপারগতার কথা জানালো।তাই,ন্যাং স্কলারশিপ পেয়ে গেলো।এসবের কিছুই জানতো না ন্যাং।সে যখন এসব জানলো তখন কী করলো বলতে পারবি?
 
এটাই হল বেস্ট ফ্রেন্ড...... 
পাঠক,গল্প শেষ এখানেই।কিন্তু শেষ হয়েও যেটুকু বলা হল না সেটা আপনারা পুরণ করে দিন।

No comments:

Post a Comment