রাহাত।দেখতে
শান্তশিষ্ট।ভদ্র ঘরের ছেলে।কিছুটা লাজুক প্রকৃতির।SSC পরীক্ষার ঠিক পরেই খুব একাকিত্ব বোধ করতে
লাগলো বিশেষ কোন একজনের জন্যে।এটার অবশ্য কারণও আছে।রাহাতের বন্ধুদের অনেকেই প্রেম
করে।আসলে এই বয়সে প্রেম করার অর্থ হল বন্ধু মহলে নিজেকে একটু বড় করে উপস্থাপন করে
তোলা।সেক্ষেত্রে রাহাতের অবস্থান একেবারে শুন্য।প্রেম করাত দূরে থাক,মেয়ে কোন
বন্ধু-ই রাহাতের ছিলোনা।সে মেয়েদের সাথে সহজভাবে কথা বলতেই পারেনা।তাছাড়া সে
পড়াশোনাতেও খুব একটা ভালো না।কাউকে আকৃষ্ট করার মত কিছুই তার মধ্যে নেই।এসব কারণে
রাহাত প্রায়ই বিষণ্ণ থাকত।হঠাত একদিন তার কিছু বন্ধু তাকে নতুন একটা বন্ধুর সাথে
পরিচয় করিয়ে দিলো।রাহাত প্রথমে নতুন বন্ধুর সাথে সখ্যতা করতে চায়ছিলো না।কিন্তু
ধীরে ধীরে সখ্যতা শুরু করলো।আস্তে আস্তে রাতেও বন্ধুতির সাথে সম্পর্ক ঘনিষ্ট হয়ে
উঠলো।সকালে,দুপুরে,বিকেলে,রাতে অন্তত একবার করে দেখা করা চাই-ই চাই।
রাহাত
কলেজের হোস্টেলে থাকে।বন্ধুটি রাহাতকে রাত জাগতে সাহায্য করে,সাহসী করে
তোলে,আড়ষ্ঠতা দূর করে,লাজুক ভাবটা সরিয়ে ফেলে ধীরে ধীরে।রাহাতও এই বন্ধুকে ছাড়া
থাকতে পারেনা।সেকেন্ড ইয়ারে উঠতেই রাহাতের কয়েকটা মেয়ে বন্ধু জুটে গেল।এখন রাহাতের
আর তেমন কোনো বিষন্নতাও আসেনা।আসলে বিষণ্নতা আসতে দেয় না রাহাতের সেই
বন্ধুটি।রাহাতের সার্বক্ষণিক সঙ্গী সে।HSC পাশের পর রাহাত ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে কোথাও
চান্স না পেয়ে কলেজের অনার্স কোর্সে ভর্তি হয়।বন্ধুটি তখনও রাহাতের সার্বক্ষণিক
সঙ্গী।রাহাত কখনই তার বন্ধুকে ছাড়া থাকতে পারেনা।হঠাত একদিন রাহাত প্রচণ্ড অসুস্থ
হয়ে পড়ে।ঠিকমত শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে পারছিলো না।বুকে প্রচণ্ড ব্যাথা। রুমমেটরা
তাড়াতাড়ি করে তাকে হাস্পাতালে নিয়ে যায়।ডাক্তাররা প্রাথমিক চিকি্ত্সা দিয়ে কিছুটা
সুস্থ করে তুলেন এবং কিছু টেস্ট করতে দেন।টেস্টে রাহাতের ফুস্ফুসে ক্যান্সার ধরা
পড়ে।
আজ
রাহাত হাস্পাতালের বেডে শুয়ে শুয়ে ভাবছে,তার সেই বন্ধুর কথা।বন্ধুটি আজও তার পাশে
আছে।রাহাত অনেক বিশ্বাস করেছিল তার বন্ধুটিকে।বন্ধুটিও সারাক্ষণ রাহাতের পাশেই
ছিলো।কিন্তু,সে রাহাতের কাছ থেকে আস্তে আস্তে সবকিছু নিয়ে নিয়েছে।রাহাতের
টাকা-পয়সা,সময়,মেজাজ এমনকি গোটা শরীরটাও।রাহাত আজ মৃত্যুর মুখে এসে দাড়িয়েছে।সবাই
ভাবছেন,রাহাতের সেই বন্ধুটি কে?হ্যাঁ,আমি বলবো তার পরিচয়।তবে,তার আগে বলুন
তো,এরকম(যে তার সঙ্গীর সব কিছু নিয়ে নেয়) বন্ধুকে কি বন্ধু বলা যায়?সে তো আমাদের
শত্রু।
আর রাহাতের সেই বন্ধুরূপী শত্রুটি হলো সিগারেট,যা রাহাতের মত এই গোটা
সমাজটাকেই জ্বালিয়ে দিচ্ছে।তাই,আসুন,আমরা সিগারেটসহ সকল প্রকার মাদক দ্রব্য হতে
দূরে থাকি।