Wednesday, 15 February 2012

বন্ধুরূপী শত্রু


রাহাত।দেখতে শান্তশিষ্ট।ভদ্র ঘরের ছেলে।কিছুটা লাজুক প্রকৃতির।SSC পরীক্ষার ঠিক পরেই খুব একাকিত্ব বোধ করতে লাগলো বিশেষ কোন একজনের জন্যে।এটার অবশ্য কারণও আছে।রাহাতের বন্ধুদের অনেকেই প্রেম করে।আসলে এই বয়সে প্রেম করার অর্থ হল বন্ধু মহলে নিজেকে একটু বড় করে উপস্থাপন করে তোলা।সেক্ষেত্রে রাহাতের অবস্থান একেবারে শুন্য।প্রেম করাত দূরে থাক,মেয়ে কোন বন্ধু-ই রাহাতের ছিলোনা।সে মেয়েদের সাথে সহজভাবে কথা বলতেই পারেনা।তাছাড়া সে পড়াশোনাতেও খুব একটা ভালো না।কাউকে আকৃষ্ট করার মত কিছুই তার মধ্যে নেই।এসব কারণে রাহাত প্রায়ই বিষণ্ণ থাকত।হঠাত একদিন তার কিছু বন্ধু তাকে নতুন একটা বন্ধুর সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো।রাহাত প্রথমে নতুন বন্ধুর সাথে সখ্যতা করতে চায়ছিলো না।কিন্তু ধীরে ধীরে সখ্যতা শুরু করলো।আস্তে আস্তে রাতেও বন্ধুতির সাথে সম্পর্ক ঘনিষ্ট হয়ে উঠলো।সকালে,দুপুরে,বিকেলে,রাতে অন্তত একবার করে দেখা করা চাই-ই চাই।
রাহাত কলেজের হোস্টেলে থাকে।বন্ধুটি রাহাতকে রাত জাগতে সাহায্য করে,সাহসী করে তোলে,আড়ষ্ঠতা দূর করে,লাজুক ভাবটা সরিয়ে ফেলে ধীরে ধীরে।রাহাতও এই বন্ধুকে ছাড়া থাকতে পারেনা।সেকেন্ড ইয়ারে উঠতেই রাহাতের কয়েকটা মেয়ে বন্ধু জুটে গেল।এখন রাহাতের আর তেমন কোনো বিষন্নতাও আসেনা।আসলে বিষণ্নতা আসতে দেয় না রাহাতের সেই বন্ধুটি।রাহাতের সার্বক্ষণিক সঙ্গী সে।HSC পাশের পর রাহাত ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে কোথাও চান্স না পেয়ে কলেজের অনার্স কোর্সে ভর্তি হয়।বন্ধুটি তখনও রাহাতের সার্বক্ষণিক সঙ্গী।রাহাত কখনই তার বন্ধুকে ছাড়া থাকতে পারেনা।হঠাত একদিন রাহাত প্রচণ্ড অসুস্থ হয়ে পড়ে।ঠিকমত শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে পারছিলো না।বুকে প্রচণ্ড ব্যাথা। রুমমেটরা তাড়াতাড়ি করে তাকে হাস্পাতালে নিয়ে যায়।ডাক্তাররা প্রাথমিক চিকি্ত্‌সা দিয়ে কিছুটা সুস্থ করে তুলেন এবং কিছু টেস্ট করতে দেন।টেস্টে রাহাতের ফুস্‌ফুসে ক্যান্সার ধরা পড়ে।
আজ রাহাত হাস্পাতালের বেডে শুয়ে শুয়ে ভাবছে,তার সেই বন্ধুর কথা।বন্ধুটি আজও তার পাশে আছে।রাহাত অনেক বিশ্বাস করেছিল তার বন্ধুটিকে।বন্ধুটিও সারাক্ষণ রাহাতের পাশেই ছিলো।কিন্তু,সে রাহাতের কাছ থেকে আস্তে আস্তে সবকিছু নিয়ে নিয়েছে।রাহাতের টাকা-পয়সা,সময়,মেজাজ এমনকি গোটা শরীরটাও।রাহাত আজ মৃত্যুর মুখে এসে দাড়িয়েছে।সবাই ভাবছেন,রাহাতের সেই বন্ধুটি কে?হ্যাঁ,আমি বলবো তার পরিচয়।তবে,তার আগে বলুন তো,এরকম(যে তার সঙ্গীর সব কিছু নিয়ে নেয়) বন্ধুকে কি বন্ধু বলা যায়?সে তো আমাদের শত্রু।
আর রাহাতের সেই বন্ধুরূপী শত্রুটি হলো সিগারেট,যা রাহাতের মত এই গোটা সমাজটাকেই জ্বালিয়ে দিচ্ছে।তাই,আসুন,আমরা সিগারেটসহ সকল প্রকার মাদক দ্রব্য হতে দূরে থাকি।

Tuesday, 14 February 2012

বাস্তবিক কল্পনা


  কিছুদিন থেকেই একটা থম্‌থমে পরিবেশ বিরাজ করছে প্রতিষ্ঠানটিতে।তাই,আজ এমডি স্যারের রুমে সভা বসেছে।ব্রেইন(এমডি) হলেন সভাপতি।শুরু হল সভাঃ
  ব্রেইনঃকিছুদিন থেকেই আপনাদের মধ্যে কাজে অবহেলার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।এটার কারণ এবং সমাধানের উপায় খুঁজতেই আজকের সভা।প্রথমেই মিস্টার স্টোমাক,আপনেই শুরু করুন।
  স্টোমাকঃধন্যবাদ মাননীয় এমডি।আপনি আমার উপর যে দায়িত্ব দিয়েছিলেন,সেগুলো আমি যথার্থভাবে পালন করছি।কিন্তু কিছুদিন থেকে আমার স্টকে কাঁচামালের(খাদ্য) ঘাটতি দেখা যাচ্ছে।তাই,আমার স্বাভাবিক কাজে একটু প্রব্লেম হচ্ছে।এই ব্যাপারে আমি মিস্টার মাঊথের দৃষ্টি আকর্ষন করেছিলাম।কিন্তু তিনি সমাধান দেন্‌নি।
  মাঊথঃএভাবে কথা বলছেন কেন মিস্টার স্টোমাক?আমি তো আপনাকে আমার সীমাবদ্ধতার কথা বলেছি।মিস্টার ব্রেইন,মিসেস হ্যান্ড কিছুদিন থেকে অফিসে আসছেন না।এর ফলে আমি যথেষ্ঠ পরিমাণ কাঁচামাল সাপ্লাই দিতে পারছিনা।এক্ষেত্রে মিস্টার হ্যান্ড(চামচের সাহায্যে) কিছুটা সাহায্য করছেন ঠিক।কিন্তু পুরোপুরি পারছেন না।
  ব্রেইনঃমিস্টার ব্রেইন,আপনার মিসেস আসছেন না কেন?
  মিস্টার হ্যান্ডঃউনি আর অফিসে আসবেন না।
  ব্রেইনঃকিন্তু কেন?
  মিস্টার হ্যান্ডঃমিস্টার নার্ভ উনাকে অপমানজনক কথা বলেছেন।তাছাড়া কাজের সময় ঠিকভাবে হেল্প করতেন না তাঁকে।
  ব্রেইনঃঘটনা সত্যি,মিস্টার নার্ভ?
  নার্ভ চুপচাপ।
  ব্রেইনঃআপনার নিরবতা-ই প্রমাণ করছে,আপনি দোষী।আপনাকে এটার জন্যে শাস্তি ভোগ করতে হবে।
  নার্ভঃআমাকে শাস্তি দিলে আসল দোষীরও শাস্তি পাওয়া উচিত।মিস্‌ হার্ট আপার সাথে মিসেস হ্যান্ডের একটু মন কষাকষি চলছিল।তাই,মিস্‌ হার্ট আপা ব্লাড সাপ্লাই এ সমস্যা করছিলেন।আমি আপনাকে এটা জানাতে চায়ছিলাম।কিন্তু হার্ট আপা আমাকে চাকরি খোয়ানোর ভয় দেখিয়ে চুপ রাখেন।
  ব্রেইনঃসত্যি,মিস্‌ হার্ট?তাহলে তো আপনাকে শাস্তি পেতে হবে।
  মিস্‌ হার্টঃআমাকে শাস্তি দিলে আমি এই অফিস ছেড়ে চলে যাবো।
  লিভারঃছিঃ মিস্‌ হার্ট।আপনার কথাতো পুরোপুরি কিডন্যাপারদের মত হয়ে যাচ্ছে।
  মিস্‌ হার্টঃএই,নিজের গায়ের রঙ আয়নায় দেখেছ একবার?কথাবার্তা ভেবে বলবে।
  স্টোমাকঃখামোখা লিভারকে ধমকাবেন না,মিস্‌।সারাদিন রুপচর্চা করতে করতে তো আপনারতো আবার অফিসের কাজের কথা মনে ই থাকে না।
  মিস্‌ হার্টঃএই মটু চুপ কর।
  নার্ভঃল্যাঙ্গুয়েজ ঠিক করুন মিস্‌।আর স্টোমাকের সাথে আমিও একমত।
  ব্রেইনঃআপনারা দয়া করে থামুন।সমস্যা সবার ই থাকে।আপনারা আবার আগের মত পুরো উদ্যমে কাজ করুন।আর,মিস্‌ হার্ট,আপনাকে ওয়ারনিং দেওয়া থাকলো।ভবিষ্যতে এরকম কাজ করলে শাস্তি আপনাকে পেতে হবে।এখন আপনারা নিজ নিজ কাজে যান।
  মিস্‌ হার্টঃএটা কী হল মিস্টার ব্রেইন?সবার সামনে আমাকে অপমান করার শাস্তি কি এরা পাবেনা?
  মিসেস আইঃআমি হার্ট আপার সাথে একমত।মেয়েরা সব জায়গায় বঞ্চিত।
  স্টোমাকঃমিস্টার ব্রেইন, মিস্‌ হার্ট এত বড় একটা অপরাধ করেও ছাড় পেয়ে যাচ্ছেন?বিচারটা কি এক পেশে হয়ে গেল না?
শুরু হল তুমুল ঝগড়াসভা অমিমাংসিতভাবে শেষ হল। এটা কল্পনা।এই প্রতিষ্ঠানটি হল আমাদের শরীর।সবাই নিজের কাজগুলো না করে অন্যের উপর দোষ চাপালে অসুস্থ হয়ে পড়ব আম্রা।সুপ্রিয় পাঠক,এবার আপনি আমাদের দেশটাকে নিজের শরীর কল্পনা করে গল্পের শুরু থেকে মিলিয়ে দেখুন্‌তো একবার।আমাদের বাস্তবতার সাথে এটার কি তফাত খুব বেশী?আশা করি বিজ্ঞ পাঠককে ভেঙ্গে বলতে হবেনা আমি কি বুঝাতে চাচ্ছি।